
এই পোস্টে আমরা সপ্তম শ্রেনীর,বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৪র্থ অধ্যায়, সূর্যালোকে রান্না সম্পর্কে জানবো।
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনঃ
গনগনে রোদে বস্তুকে রাখলে সব বস্তু কি একই রকম গরম হয়ে ওঠে?কোন কোন বস্তু রোদে রাখলে বেশি গরম হয়?
উপরের জিনিসগুলোর (লোহার বস্তু, কাচের বস্তু, পানি, সাদা কাপড় ও রঙিন কাপড়)মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাচ্ছ? বস্তুগুলো কী দিয়ে তৈরি, কোন রঙের ইত্যাদি দিকগুলো খেয়াল করে দেখো। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৩৯)
বস্তু | তাপমাত্রা |
লোহার বস্তু | ২৬°C |
কাচের বস্তু | ২৪°C |
পানি | ২৭°C |
সাদা কাপড় | ২৫°C |
রঙিন কাপড় | ২৭°C |
অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট রোদে রেখে দেওয়ার পর থার্মোমিটার দিয়ে বস্তু পাঁচটির তাপমাত্রা পুনরায় পরিমাপ করো এবং নিচের ছকে দুইবার নেয়া তাপমাত্রার তথ্যই লিখে রাখো।
বস্তুর নাম | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বের তাপমাত্রা | সূর্যের আলোতে রাখার পরের তাপমাত্রা | মন্তব্য |
লোহার বস্তু | ২৬° C | ৮০° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বে তাপমাত্রা ছিল ২৬°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা ৮০° C হয়েছে । |
কাচের বস্তু | ২৪° C | ৭৬° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বে তাপমাত্রা ছিল ২৪°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭৬° C |
পানি | ২৭° C | ৮২° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৭°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৮২°C । |
সাদা কাপড় | ২৫° C | ৭২° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৫°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭২°C । |
রঙিন কাপড় | ২৭° C | ৭৫° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৭°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭৫°C । |
আগের আর পরের তাপমাত্রার কোন পার্থক্য কি দেখতে পাচ্ছ?
পার্থক্য থেকে থাকলে কারণ কী হতে পারে?
প্রতিটি বস্তুর তাপমাত্রার পরিবর্তন কি একইরকম ঘটছে?
৩য় ও ৪র্থ সেশন
তাপ কী?
তাপ এক ধরনের শক্তি।এই শক্তিটা এসেছে পদার্থের অণু পরমাণুর সম্মিলিত গতিশক্তি বা কম্পন শক্তি থেকে।
তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হয়?
তাপ এক ধরনের শক্তি। আমাদের নানা কাজে আমরা এই তাপ শক্তিকে ব্যবহার করি। কোনো কিছু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে সেটাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হয়। কাজেই তাপ শক্তিকে আমাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হয় কিংবা সঞ্চালন করতে হয়। তিনটি উপায়ে তাপ সঞ্চালিত হয় সেগুলো হচ্ছে- তাপের পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ।
তাপমাত্রা কী?
তাপমাত্রা হচ্ছে কোনোকিছু কতটুকু উত্তপ্ত কিংবা কতটুকু শীতল তার একটি পরিমাপ।
তাপের পরিবহন পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
আমরা জানি, কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে তাপ হচ্ছে অণুগুলোর কম্পন। তাই যখন কঠিন পদার্থের এক প্রান্ত উত্তপ্ত করা হয়, তখন সেই প্রান্তের অণুগুলো নিজের জায়গায় থেকেই কাঁপতে থাকে। কঠিন পদার্থের একটি অণুর সঙ্গে অন্য অণু যুক্ত । তাই একটা অণু কাঁপতে থাকলে সেটি তার পাশের অন্য অণুকেও কাঁপাতে শুরু করে। সেই অণুটি তখন তার পাশের অণুকে কাঁপায়। এভাবে কম্পনটি পদার্থের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিবাহিত হয়। এটাই তাপের পরিবহন পদ্ধতি।
তাপের পরিচলন বলতে কী বুঝ?
যে পদ্ধতিতে তাপ কোনো পদার্থের অনুগুলো চলাচলের দ্বারা উষ্ণতার অংশ থেকে শীতল অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে পরিচলন বলে। এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে তরল ও বায়বীয় পদার্থগুলোতে এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। তাপ গ্রহণ করে পদার্থের উষ্ণ অংশের অণুগুলো শীতল অংশের দিকে প্রবাহিত হয়। এভাবে অণুগুলো স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজ গতির সাহায্যে তাপ সঞ্চালিত করে।
তাপের বিকিরণ বলতে কী বুঝ?
আমরা যদি জ্বলন্ত আগুনের পাশে দাড়ায়, তখন এক ধরনের তাপ অনুভব করি। এই তাপটি পরিবহনের মাধ্যমে আসেনি, পরিচলনের মাধ্যমেও আসেনি। আমরা যখন রোদে দাঁড়াই, তখন যে তাপ অনুভব করি, সেই তাপও পরিবহন কিংবা পরিচলন পদ্ধতিতে সূর্য থেকে পৌঁছায়নি, এই তাপ সঞ্চালনের পদ্ধতির নাম বিকিরণ। এ পদ্ধতিতে তাপ কোনো প্রকার মাধ্যম ছাড়াই সঞ্চালিত হয়।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন
সৌরচুল্লী বানানোর প্রক্রিয়া বর্ণনা কর । (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৪১)
- তুমি যে বাক্সটি নিয়েছো সেটির উপরের ঢাকনাটা কেটে আলাদা করে নাও যাতে এর মোট ৫টি তল থাকে।
- এবার বাক্সটির ভেতরের অংশে প্রতিটি তলের দৈর্ঘ্য ও প্রশ্ন মেপে সমান করে ককশীট বা শোলা কেটে নাও।
- শোলার উপরে আঠা দিয়ে পেছন দিক থেকে পিন ফুটিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার অথবা র্যাপিং পেপারের উল্টা দিকের চকচকে তলটা এমনভাবে লাগাও যাতে সেটি যথেষ্ট মসৃণ হয়।
- এবার নিচের তলটাকে বাক্সের ভেতরে আগে বসিয়ে দিয়ে চারপাশের তলের টুকরোগুলো স্কচটেপ অথবা আঠা দিয়ে লাগিয়ে ফেলো।
- এখন উপরের প্রতিফলক বানানোর জন্য বাক্সের উপরের তলের কেটে রাখা টুকরোতে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল (অথবা তোমাদের বেছে নেয়া র্যাপিং পেপারের উল্টো দিকের চকচকে তল) সাঁটিয়ে নিয়ে এটাকে এমনভাবে বাক্সের উপরে স্থাপন করো যাতে এটা মোটামুটি ৬০° কোণে হেলে থেকে এর তলে প্রতিফলিত হওয়া আলোকরশ্মি বাক্সের মধ্যে গিয়ে পরে।
- তোমার সৌর চুলা বানানো প্রায় শেষ। চুলাটা ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করতে এটাকে সূর্যের নিচে নিয়ে ভেতরে একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে ডিম ভেঙে নিয়ে বাটিটি ভেতরে রাখো।
- বাক্সটির খোলা তলের উপর এবার একটা ঢাকনা বসাতে হবে, বাক্সের মাপের একটা ঢাকনা বানিয়ে নাও। ঢাকনার চারদিকে কার্ডবোর্ডের অংশ বাদ রেখে ভেতরে অংশ কেটে বের করে নাও। এই ফাঁকা স্থান কাঁচ অথবা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে আটকে দাও যাতে ঢাকনা বন্ধ করার পরেও এই স্বচ্ছ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো বাক্সের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এই কাঁচ বা পলিথিনের ঢাকনা যাতে খুলতে বা আটকাতে সুবিধা হয় সেজন্য স্কচটেপ আর কাগজ দিয়ে একটা কব্জার মতো বানিয়ে নাও।
তোমার দলের বানানো সৌরচুল্লীর একটি ছবি নিচের ফাঁকা জায়গায় এঁকে রাখো। আর পাশে কী কী উপকরণ ব্যবহার করলে তার তালিকে টুকে রাখো।
সৌরচুল্লী তৈরির উপকরণগুলোর কোনটা কেন ব্যবহার করা হয়েছে বলতে পারো? সৌরচুল্লীকে কার্যকর করতে এই উপকরণগুলো কেন বেছে নেয়া হল? এই বিষয়ে তোমাদের মতামত কী? দলে বসে আলোচনা কর এবং নিচের ছকে লিখে রাখো।
উপকরণের নাম |
উপকরণ নির্বাচনের কারণ |
ফ্লাইবোর্ড/কাঠ বোর্ড |
এটি টেকসই, সহজেই নষ্ট হয় না ফলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। |
ককসিট |
ফ্লাইবোর্ডকে তাপ থেকে মুক্ত রাখে। |
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার |
এটির ফলে ভেতরের তাপমাত্রা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি |
পেরেক |
ফ্লাইবোর্ড গুলোকে একে অপরের সাথে আটকিয়ে রাখতে |
কাচের পাত |
কাচের পাত দেওয়ার কারণে তাপ বাহিরে যেতে পারে না। |
আঠা |
করুসেট এবং অ্যালুমিনিয়াম পেপার লাগানোর জন্য কাজে |
আয়না |
সূর্যের আলোর প্রতিফলেন সাহায্য করে। |
হাতল |
সৌরচুল্লী যেকোন জায়গায় বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। |
কব্জা |
সৌরচুল্লীকে সহজেই উঠানো এবং নামানো যায়। |
বাইসাইকেল স্পোক |
সৌরচুল্লী খোলা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রে চুল্লীর ভেতরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত ছিল?কোন দলের ডিম সেদ্ধ হতে সময় বেশি লেগেছে?তোমাদের চুল্লীর পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনলে কি আলো ভালোভাবে কাজ হতো?
সপ্তম ও অষ্ট্ম সেশন
আধা ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে দেখো চুলার মধ্যে তাপমাত্রা ও ডিমে কোনো পরিবর্তন হয় কি না।
সময় | ০ মিনিট | ৫ মিনিট | ১০ মিনিট | ১৫ মিনিট | ২০ মিনিট | ২৫ মিনিট | ৩০ মিনিট |
তাপমাত্রা (°সেলসিয়াস) | পরিবর্তন হয়নি। | ৬°C | ১৬°C | ৩৭°C | ৪৮°C | ৬৪°C | ৮০°C |
শক্তির কোন কোন রুপ লক্ষ্য করেছ? | শক্তি কোথা থেকে কোথায় স্থানান্তরিত হয়েছ? | কোন কোন ক্ষেত্রে শক্তির কোন একটি রুপ থেকে অন্য রুপে রুপান্তরিত |
তাপশক্তি | সূর্যের আলোকশক্তি তাপশক্তিতে স্থানান্তর | চুল্লীর ফয়েল পেপারে দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোক পড়লে তা তাপশক্তিতে রুপান্তরিত হয় |
রাসায়নিক শক্তি | তাপশক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি | তাপশক্তির মাধ্যমে ডিমটি সিদ্ধ হয় এবং প্রোটিন অংশকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন |
শব্দশক্তি | তাপশক্তি থেকে শব্দশক্তি | তাপশক্তির প্রয়োগে ডিম ভাজার শব্দ শোনা যায়, শব্দশক্তিতে রুপানরিত হয় |