
পদার্থের সুলুকসন্ধান! অর্থাৎ পদার্থের খোঁজখবর। এই যে আমাদের চারপাশে এত বস্তু আমরা দেখি তার ভেতরকার গঠন আসলে কেমন? পদার্থকে আমরা যদি ভাঙতে থাকি, তাহলে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে গিয়ে আমরা আসলে কী দেখব? ঠিক কী কারণে আমরা একেক পদার্থে একেক রকম বৈশিষ্ট্য দেখি? এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমাদের এবারের শিখন অভিজ্ঞতা ‘পদার্থের সুলুকসন্ধান!’
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন ঃ
ধাতুঃ যে সকল পদার্থ চকচকে, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী সেগুলোকে ধাতু বলে। যেমন: স্টিল, লোহা, তামা, আলুমিনিয়াম ইত্যাদি।
অধাতুঃ যে সকল পদার্থ চকচকে নয়, ভঙ্গুর, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে না এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয় সেগুলোকে অধাতু বলে। যেমন: কাঠের বস্তু, প্লাস্টিকের বস্তু, কাপড় ইত্যাদি।
বস্তুর নাম | বস্তুটি যে | বস্তুটির | বস্তুটির | বস্তুটি কি কাজে |
কড়াই | লোহা | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = না | খাবার রাখা বা রান্না করার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
ফ্যান | লোহা | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = না | ঘর ঠাণ্ডা বা |
হাড়ি | এলুমিনিয়াম/দস্তা/স্টীল | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = না | খাবার রাখা বা রান্না করার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
চেয়ার/টেবিল | কাঠ | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | বসার জন্য |
টুল/বেঞ্চ | কাঠ | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | বসার জন্য |
হোয়াইট বোর্ড | প্লাস্টিক | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | লেখার জন্য |
ডাস্টার | প্লাস্টিক,কাঠ ও কাপড় | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | লেখা মুছার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
কলম | প্লাস্টিক | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | লেখার জন্য |
এল.ই.ডি লাইট | প্লাস্টিক | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | ঘর আলোকিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
থালা-বাসন | প্লাস্টিক | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | খাবার রাখার |
সুইচ বোর্ড | প্লাস্টিক | কঠিন | ভঙ্গুর কিনা = হ্যাঁ | বিদ্যুৎ সংযোগের |
গরম হাঁড়ি-পাতিল ধরতে গেলে কাঠের হাতল বা কাপড়ের হাতা ব্যবহার করা হয়, কেন?
উত্তর : গরম হাঁড়ি-পাতিল ধরতে গেলে কাঠের হাতল বা কাপড়ের হাতা ব্যবহার করা হয়। কারণ কাঠ বা কাপড় তাপ পরিবহন করে না। তাই এটি সহজে গরম হয় না। ফলে এগুলো দিয়ে গরম হাঁড়ি-পাতিল ধরলে হাত পুড়ে যায় না।
বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য যে তার ব্যবহার করা হয় তার উপরের স্তর প্লাস্টিকের হলেও ভেতরে তামার তার ব্যবহৃত হয়, সেটাই বা কেন?
উত্তর: বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য যে তার ব্যবহৃত হয় তার ভিতরে থাকে তামার তার যা বিদ্যুৎ পরিবহন করে। সরাসরি তামার তার যদি বৈদ্যুতিক কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে তামার তারের উপরে প্লাস্টিকের স্তর দেওয়া হয়, কারণ প্লাস্টিক বিদ্যুৎ অপরিবাহী। যার ফলে সহজে কোন দুর্ঘটনা ঘটে না।
কেন কাঠ, প্লাস্টিক বা কাপড় যে বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, তার থেকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, লোহা, তামা এদের ধর্ম আলাদা হয়?
উত্তর: কাঠ, প্লাস্টিক বা কাপড় হলো অধাতু। এরা তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। এদের আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় না। অন্যদিকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, তামা হলো ধাতু। এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। এরা দেখতে চকচকে এবং আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
উপরের ছকের বস্তুগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নিচের শর্ত অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করোঃ
বস্তুর | কী | ধা্তু নাকি অধাতু | তাপ পরিবহন করে কিনা? | বিদ্যুৎ পরিবহন করে কিনা। |
চেয়ার/টেবিল | কাঠ | অধাতু | না/তাপ অপরিবাহী | না/বিদ্যুৎ অপরিবাহী |
কাপড় | সুতা | অধাতু | না/তাপ অপরিবাহী | না/বিদ্যুৎ অপরিবাহী |
তামার তার | তামা | ধাতু | হ্যাঁ/তাপ সুপরিবাহী | হ্যাঁ/বিদ্যুৎ সুপরিবাহী |
হাড়ি | লোহা | ধাতু | হ্যাঁ/তাপ সুপরিবাহী | হ্যাঁ/বিদ্যুৎ সুপরিবাহী |
স্টিল | স্টিল | ধাতু | হ্যাঁ/তাপ সুপরিবাহী | হ্যাঁ/বিদ্যুৎ সুপরিবাহী |
লোহা | লোহা | ধাতু | হ্যাঁ/বিদ্যুৎ সুপরিবাহী | হ্যাঁ/বিদ্যুৎ সুপরিবাহী |
প্লাস্টিকের | প্লাস্টিক | অধাতু | না/বিদ্যুৎ অপরিবাহী | না/বিদ্যুৎ অপরিবাহী |
যেসব পদার্থ বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবহন করে, তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো কী? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ১৯)
কেন কিছু কিছু পদার্থ দিয়ে তৈরি বস্তু তাপ পরিবহন করে আবার কিছু বস্তু করে না? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ১৯)
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন ঃ
পরমাণু মডেলে ইলেক্ট্রনগুলো কয়টি কক্ষপথে সাজানো আছে, পারমানবিক ভর, সংখ্যা ইত্যাদিঃ
ধাতু ও অধাতুর পার্থক্যঃ (পৃষ্ঠা নং ২১)
ধাতু | অধাতু |
১. সাধারণত উজ্জ্বল হয় | ১. সাধারণত উজ্জ্বল নয় |
২. সাধারণত শক্ত ও ওজনে ভারী হয়।
| ২. সাধারণত নরম ও ওজনে তুলনামূলক কম ভারী হয়। |
৩. ধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়। | ৩. অধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় না। |
৪. তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।
| ৪. তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। |
৫. ঘাতসহ ও নমনীয়। একে পিটিয়ে পাতলা পাতে ও সরু তারে পরিণত করা যায়। | ৫. অধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে কিংবা সরু তারে পরিণত করা যায় না। |
পরিবাহী পদার্থ বলতে কী বুঝ?
উত্তর: যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন হয়, তাদেরকে পরিবাহী বলে। যেমন- লোহা(Fe), তামা(Cu), নিকেল(Ni), সোনা(Au) রূপা(Ag),আলুমিনিয়াম(Al) ইত্যাদি।
অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: উত্তর: যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন হয় না, তাদেরকে অপরিবাহী বলে। যেমন- সালফার(S), ফসফরাস(P), নাইট্রোজেন(N) ইত্যাদি।
অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি সেসব পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বলে। যেমন- জার্মেনিয়াম, সিলিকন(Si)ইত্যাদি।
ইলেকট্রন বিন্যাসের কোন পার্থক্যের কারণে ধাতু বেশি তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়?
উত্তর: ধাতব স্ফটিকে ধাতব বন্ধন থাকে। ধাতব পরমাণুগুলো এদের সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে।ধাতুর পরমাণুসমূহ যে ইলেকট্রন ত্যাগ করে সেই ইলেকট্রনগুলো ধাতব স্ফটিকের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে মুক্তভাবে চলাচল করে।এদেরকে সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন বলে।
সঞ্চারণশীল ইলেকট্রনগুলো কোন ধাতব পরমাণুর সাথে নির্দিষ্টভাবে যুক্ত থাকে না। এই সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন যেহেতু সমস্ত ধাতব স্ফটিকের উপর মুক্তভাবে চলাচল করার কারনে এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনে সহায়তা করে।এজন্য ধাতুসমূহ তাপ এবং বিদ্যুৎ সুপরিবাহী হয়।
দৈনন্দিন জীবনে তাপ ও বিদ্যুৎ সম্পর্কিত কাজের উদাহরণঃ
যে কাজে প্রয়োজন (উদাহরণ) চুলায় রান্না | ধাতু/অধাতু |
বৈদ্যুতিক তার | ধাতু যেমন- তামা, নাইক্রোম, টাংস্টেন |
বৈদ্যুতিক বাল্ব | ধাতু যেমন- টাংস্টেন, অধাতু-প্লাস্টিক |
পাখা চালানো | ধাতু |
তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র | ধাতু যেমন- পারদ |
ব্যাটারী তৈরী | ধাতু যেমন- পিতল, দস্তা, তামা। অধাতু-কয়লা, কার্বন |
জেনারেটর চালানো | ধাতু |
কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণুগুলো কীভাবে বিন্যাস্ত থাকে?
পঞ্চম ও ষষ্ট সেশন ঃ
পানি কিভাবে আগুন নেভাতে সাহায্য করে?
কার্বন ডাই অক্সাইড কীভাবে আগুন নেভাতে সাহায্য করে?
পদার্থ কী?
মৌলিক পদার্থ কী?
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
পদার্থ | স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অবস্থা (কঠিন/তরল/ বায়বীয়) | আগুনে দাহ্য কিনা | অন্যান্য বৈশিষ্ট্য (স্বাদ/গন্ধ/বর্ণ) যদি জানা থাকে |
অক্সিজেন(O2) | বায়বীয় | হ্যা | স্বাদহীন, গন্ধহীন, বর্ণহীন |
হাইড্রোজেন(H2) | বায়বীয় | হ্যা | স্বাদহীন, গন্ধহীন, বর্ণহীন |
পানি(H2O) | তরল | না | স্বাদহীন, গন্ধহীন, বর্ণহীন |
কার্বন ডাই অক্সাইড (C02) | বায়বীয় | না | স্বাদহীন, গন্ধহীন, বর্ণহীন |
কার্বন (C) | কঠিন | হ্যা | স্বাদহীন, গন্ধহীন। |
মিশ্রণ কি?
বিশুদ্ধ পদার্থ কি?
পদার্থ | স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অবস্থা (কঠিন/তরল/বায়বীয়) | আগুনে দাহ্য কিনা? | অন্যান্য বৈশিষ্ট্য (স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ) |
পানি | তরল | না | স্বাদহীন,বর্ণহীন, গন্ধহীন |
লবন/চিনি | কঠিন (লবণ) | না | নোনতা,গন্ধহীন, বর্ণঃ সাদা,লাল,নীল, সবুজ ইত্যাদি। |
লবন/চিনি | কঠিন ( চিনি) | না | মিষ্টি,গন্ধহীন, বর্ণঃ সাদা, লাল, বাদামী |
পানি ও লবন/চিনি মিশ্রনে তৈরী সরবত | তরল | না | চিনি ও লবনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে |
মৌল বা যৌগের সংকেত | কোণ মৌলের কয়টি পরমাণু রয়েছে? |
CO | কার্বন ১টি, অক্সিজেন ১টি |
H2SO4 | হাইড্রোজেন ২টি, সালফার ১টি, অক্সিজেন ৪টি |
O3 | অক্সিজেন ৩টি |
N2O | নাইট্রোজেন ২টি,অক্সিজেন ১টি |
সপ্তম ও অষ্টম সেশনঃ
খুঁটির ছায়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য হওয়ার কারণ কী?
★খুঁটির ছায়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য হওয়ার কারণ:
সূর্যের উচ্চতা সারাদিন পরিবর্তিত হয়। সূর্যোদয়ের সময়, সূর্য দিগন্তের কাছাকাছি থাকে এবং ছায়া দীর্ঘ হয়। দুপুরের সময়, সূর্য আকাশে সবচেয়ে উঁচুতে থাকে এবং ছায়া সবচেয়ে ছোট হয়। সূর্যাস্তের সময়, সূর্য আবার দিগন্তের কাছাকাছি চলে আসে এবং ছায়া আবার দীর্ঘ হয়।
*মৌলিক পদার্থ, যৌগিক পদার্থ এবং মিশ্রনের অনু,পরমাণুগুলো কিভাবে বিন্যস্ত থাকে? এবং এদের পার্থক্য কী?
মৌলিক পদার্থ, যৌগিক পদার্থ এবং মিশ্রনের মধ্যে পার্থক্যঃ
বৈশিষ্ট্য |
মৌলিক পদার্থ |
যৌগিক পদার্থ |
মিশ্রণ |
উপাদান |
একই রকম পরমাণু |
ভিন্ন ধরণের |
ভিন্ন ধরণের |
অনুপাত |
নির্দিষ্ট |
নির্দিষ্ট |
নির্দিষ্ট নয় |
বন্ধন |
রাসায়নিক বন্ধন |
রাসায়নিক বন্ধন |
শারীরিক বন্ধন |
বিভাজন |
ভাঙ্গা যায়না |
ভাঙ্গা যায় |
আলাদা করা |
উদাহরণ |
অক্সিজেন, |
পানি, কার্বন |
বাতাস, ব্রোঞ্জ, |
তোমার দল একই পানি এবং পানি লবনের মিশ্রণের স্ফুটনাংক একাধিকবার পরিমাপ করলে ফলাফল কী হুবহু একই এসেছে?
*সকল দল একই পানি এবং পানি লবনের মিশ্রণের স্ফুটনাংক পরিমাপ কি একই হয়েছে নাকি আলাদা?
*কেন একই পদার্থ হওয়ার পরেও স্ফুটনাংক হুবহু একই হলোনা ?
- পরিমাপের ত্রুটি,
- যন্ত্রপাতির ত্রুটি,
- মানুষের ত্রুটি,
- পরিবেশগত প্রভাব।